প্রণোদনার অংশ হিসেবে পেঁয়াজের বীজ তালিকাভুক্ত কৃষকদের আনুপাতিক হারে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বিজেই আস্থা রেখে বিপাকে হাজারো কৃষক। প্রণোদনার চারা উৎপাদন করতে না পাড়ায়, সংকট সৃষ্টি হয়েছে চারার বাজারে, অতিরিক্ত চাহিদার কারণে হুট করেই দাম হয়েছে দ্বিগুণ। কৃষকের জমি প্রস্তুত, থেকে শুরু করে চলে গেছে অনেক টাকা, আবার বার-তী দামে চারা কিনে বিশাল লোকসানের মুখে কৃষক। অনেকের এতো দামে চারা কেনার সামর্থ্য না থাকায় পড়েই থাকছে জমি।
অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকতা মশিউর রহমান প্রণোদনার ৩০ লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছেন। কোনো রুপ টেন্ডার ছাড়া কিনেছেন বীজ। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে সংগৃহীত মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের বীজের কারণেই হয়েছে কৃষকের লোকসান।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। দেশের সুনামধন্য লাল-তীর কোম্পানির বীজ বলে বিশ্বস্ততা অর্জনের চেষ্টা চলছে। বিতরণ করা বীজের স্যাম্পল স্থানীয় একাধিক অবিজ্ঞ বীজ বিক্রেতাদের দেখালে তাঁরা বলে, এটা অনেক পুরোনো এতে কখনো গাছে উঠবে না।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী বহু কৃষক তাদের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কৃষক বাদশা বলেন, কৃষি অফিস থেকে লাল তীরের বীজ বলে আমাকে দিয়েছিলো, আমি চারা উৎপাদনের জন্য বপন করলে ১,২% চারাও গজায়নি। আমি ২৫ শতাংশ জমি রেখেছিলাম পিঁয়াজ লাগানোর জন্য। এবার আর পেঁয়াজ লাগানো আমার দ্বারা সম্ভব হবেনা ৪,০০০ টাকা মন পেঁয়াজ চারা কেনার সামর্থ্য নাই।
কৃষক আতাউর রহমান জানান, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে আমাদের এই বীজ দেয়, বলে লাল তীর কোম্পানীর চারা করার জন্য লাগিয়ে একটি গাছো উঠেনি। আমার জমিটা পড়ে থাকবে আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই! তাঁর আমাদের কৃষকদের ক্ষতি করে প্রধানমন্ত্রীর থেকে টাকা নিয়ে ঠিকই পকেটে ঢুকিয়েছে। এবছর আমাদের কারো পেঁয়াজ হবেনা আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
কৃষক তুকলেফুল ইসলাম জানায়, বীজে একটা গাছো উঠেনি, ৮ কাটা লাগনোর জন্য রেখেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীজ এমন দুর্নীতি করলো। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।
কৃষক মানিক জানায়, আমি যে-ই খেতটা-তে দাড়িয়ে আছি এটি লাল তীর বলে প্রণোদনার বীজ দেয়।ডুপ্লিকেট বীজ দিয়ে মানুষকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। আমি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে বীজতলায় ৮ থেকে ১০ চারা উঠেছে মাত্র আবার এগুলো স্বাস্হ্য-সবল না এগুলো লাগানোও যাবেনা। আমি ১৫ কাটা জমি লাগানোর জন্য রেখেছিলাম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবেদন, আপনার দেওয়া বীজ নিয়ে যাঁরা প্রতারণা করলো তাদের শাস্তি-হোক। আমাদের ক্ষতিপুরণ দেওয়া হোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কৃষক জানায়, এই ভুয়া বিজের প্রতি ৫ হাজার টাকা খরচ হলো। জমি রেখেছিলাম এখন কি লাগাবো এতো দাম দিয়ে চারা কেনা আদৌও সম্ভব না। এমন প্রতারণা কারিদের শাস্তি হওয়া দরকার, অনেকেই তাদের জমির ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেয়ার করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে লাল-তীর বীজের জুনিয়র ম্যানেজার হামিদুর রহমান জানান, আমাদের থেকে কোনো বীজ দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিস নেয়নি। আমাদের বীজ টিনের কৌটায় থাকে খোলা বীজ আমাদের নয়। আমাদের কোম্পানীর বীজ কেমন ফলাফল দিচ্ছে মাঠ বিশ্লেষণ করলেই পাবেন। এটা খুবই দুঃখজনক আমাদের কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।
করোনা কাল থেকে শুরু করে বিশাল লোকসানের সম্মুখীন কৃষক সমাজ। প্রণোদনার বীজে অস্তা রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর সপ্ন দেখেছিলেন অনেকই। কিন্তু কিছু দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তা দের কারণে জমি পড়ে থাকলো আরও লোকসানে পড়লো কৃষক।
কৃষি অফিসার মশিউর রহমান জানান, কৃষকদের কাছথেকে আমরা ৬শ টাকা কেজি দরে বীজ কিনি তবে শীতের কারণে এগুলো জন্মায়নি। ৮০% সফলতার গ্যারান্টী দিলেও তা হয়নি। তাদের দিকেও তাকাতে হচ্ছে তাদের কিছু জরিমানা করা হবে।
এমতাবস্থায় সাধারণ কৃষকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দুর্নীতি গ্রস্ত কৃষি অফিসার মশিউর রহমান প্রত্যাহারের দাবী উঠেছে।
এদিকে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, আমাদের এসব বীজ শীতের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কিছুটা কম আকারে গজিয়েছে। এগুলাে নিয়ে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। আগামীতে এসব কৃষকদের আবারও প্রনোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
0 মন্তব্যসমূহ