তুলির খোঁচায় পরিধেয় পোশাকে বাহারি নকশা, ছবি, ফুল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন তন্বী। তার এই সৃষ্টিকর্মের নাম দিয়েছেন ‘রংরাজত্ব’। রংরাজত্ব এখন তার পরিচয়। তার কাজ দ্বারাই সে সকলের কাছে পরিচিত হচ্ছে। পরিচিত পরিসরে তন্বীর পোশাকের চাহিদা ব্যাপক। দিন গড়ানোর সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে ‘রংরাজত্ব’র তৈরী পোশাকের। তার স্বপ্ন রংরাজত্ব ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হবে।
প্রথমে শখের বসে নিজের পরিধেয় কাপড় রাঙিয়ে তুলতেন রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তন্বী। তবে মানুষের আগ্রহের ফলশ্রুতিতে এটাকে ব্যবসায় পরিণত করেন তিনি। আর এই কাজে শুরু থেকেই পেয়েছেন পরিবারের সমর্থন।
তন্বীর বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার গৌড়খাই গ্রামে। ব্যবসায়ী বাবা জনাব আলী ও গৃহিনী মা নাসিমা খাতুন কখনোই বাধ সাধেননি মেয়ের শখে। তবে পেশা বা ব্যবসায় পরিণত করার ক্ষেত্রেও যে তাদের আগ্রহ ছিল তেমনটাও না। মেয়ে শখের বসে করছে; করুক, পরে হয়তো চাকরী-বাকরী করবে- এমন ধারণা থেকেই মেয়ের কাজকে উৎসাহিত করেছেন। পরবর্তীতে বানিজ্যিকিকরণের ক্ষেত্রেও মেয়ের সৃজনশীল কাজে বাঁধা দেননি তারা। এখন আর পরিবার থেকে তন্বীকে চাকরী করার তাগিদ দেয়া হয়না বলে জানান তন্বী।
তন্বী বলেন, এখন আর জবের কথা বলেন না, তারা বুঝে গেছেন আমার দ্বারা চাকরী করা হবে না। আর এখান থেকেও ভালো আয়ের সুযোগ রয়েছে, এজন্য পরিবার থেকে আর কোন চাপ আসে না।
কিভাবে শুরু করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তন্বী বলেন, অনার্সে ভর্তি হওয়ার পরে খুবই টেনশন কাজ করতো, কি করব? কিভাবে ক্যারিয়ার দাঁড় করাবো? বিভিন্ন কøাবে গেলাম, কিন্তু কিছুই স্থির করতে পারছিলাম না। হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম, এক রুমমেট ব্লকের কাজ করছেন। তার জিনিসপত্রগুলো দেখলাম। মনে হলো, এগুলো আমি করতে পারব। তার কাছ থেকে জেনে নিজেই বাজারে গিয়ে রং কিনে নিয়ে আসলাম। এরপর নিজের দুই-একটা কাপড়ে কাজ করলাম। নিজের কাজের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। সেখান থেকেই অনেকে জেনে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে, এভাবেই শুরু করি।
ফেসবুকে অনেকেই তার পরিধেয় পোশাকের কপি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ফলে শখের বসে শুরু করলেও পরে এটাকে বানিজ্যিক রুপ দেন তন্বী। তিনি বলেন, অনেকের কাছে সাড়া পেলাম। কলেজে নিজের জামাগুলো পরে আসতাম, সবাই পছন্দ করতো। প্রথমে শ্রাবণী ও মৌসুমী নামের দুই বন্ধু অর্ডার করে। পরে দেখলাম এটার অনেক ডিমান্ড। তখন এটা সিরিয়াসলি নিলাম। ভেবে দেখলাম, এটা প্রফেশনালি নেয়া যায়। ২০১৯ সালের দিকে এটা বানিজ্যিকভাবে শুরু করি।
খুব অল্প টাকাতেই কাজ শুরু করা যায় বলে জানান তন্বী। তিনি বলেন, ব্লকের কাজ খুব অল্প টাকাতেই শুরু করা যায়। শুরুতে কাস্টমাইজ ডিজাইন করতাম। রং তুলি থাকতোই, কাপড় বা পোশাক কাস্টমার সরবরাহ করতেন, আমি শুধু একে দিতাম। পরে ভেবে দেখলাম এতে আমার নিজস্বতা বলে কিছু থাকলো না, সেখান থেকেই ‘রংরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার চিন্তা মাথায় আসে।
তিনি বলেন, প্রথমে নাম দিয়েছিলাম, কিংডম অব কালারস। পরে নাম পরিবর্তন করি। রং, রাজত্ব ও রাজশাহী এই তিনটির সমন্বয়ে নামকরণ করা হয়েছে। আর এই কাজে শুরু থেকেই পাশে পেয়েছেন বন্ধু আনিকা তাবাসসুমকে। আনিকার পরামর্শ ও উৎসাহেই ফেইসবুক পেইজ খুলেছেন বলে জানান তন্বী।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তন্বীর কোন কর্মী নেই। একাই কাজ করেন। প্রতিদিন অনেক অর্ডার পান। কিন্তু লোকবল না থাকায় সবগুলো অর্ডার ধরতে পারেন না।
তন্বী জানান, প্রতিদিন প্রায় ৩-৪টা করে শাড়ী, কামিজ, থ্রি-পিছ ও বাচ্চাদের পোশাক ও অন্যান্য অসংখ্য পোশাকের কাজ পান তিনি। এর বাইরেও শুরু করেছেন হাফ-সিল্কের শাড়ী ও থ্রি-পিছ বিক্রি। গত শুক্রবারেই ১০ হাজার টাকার ডেলিভারি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
তন্বী বলেন, অনেক বেশি করে তৈরী করতে পারিনা, একটা দুইটা করে তৈরী করি আর বিক্রি করি। চলতি বছরের মার্চ থেকে কয়েক মাস বেশ কিছু পাইকারি বিক্রি করেছি। কিন্তু তারা আমার প্রোডাক্ট নিজেদের নামে ব্যবহার করে, তাই হোল সেল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
সময়ের সাথে সাথে নিজের ব্যবসা বাড়াতে চান তন্বী। কাজ দিতে চান আরও অনেক তরুণকে। হতে চান সফল উদ্যোক্তা। যারা এখনও দ্বিধাদ্বন্দে ভূগছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তন্বী বলেন, বেশি ভাববেন না, শুরু করুন। সফলতা আসবেই ইনশাল্লাহ।
0 মন্তব্যসমূহ