উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের গোটিয়া গ্রামে পরিত্যক্ত বোতলের দ্বারা বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। খবির আলী মোল্লার ছেলে আনোয়ার আলী পারভেজ বাড়িটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এমন ব্যতিক্রমী চিন্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার আলী পারভেজ জানান, আমি বহুজাতিক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজে যেতে হয়। আমি প্লাস্টিকের বোতলে তৈরি করা বাড়ি সিলেট ও কুমিল্লায় দেখতে পাই। সেখান থেকেই উৎসাহ জাগে। এরপর একজন স্থপতি বড় ভাইয়ের পরামর্শে আমি পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহের পর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আর এই বোতল গুলো আমাদের ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার পাশাপাশি নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার ভাঙারির দোকান থেকে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনে আনছি।
খবির আলী মোল্লা (৫০) বলেন, তিনি একজন কৃষক মানুষ। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার। মেয়েরা এখন স্বামীর ঘরে। ছেলে কোম্পানিতে চাকরি করে। ছেলে প্রথম যখন বোতল দিয়ে বাড়ি করবে বলেছে তখন অনেক টাকা লোকসান হবে ভেবে তার মন খারাপ লেগেছিল।
এখন তাদের বাড়ি তৈরি দেখতে বিভিন্ন লোকজন আসছেন। দেখে সবাই ভালো বলছেন তাই অনেক ভালো লাগছে।
বাড়ি তৈরিতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরছে অনেকেই। এর মধ্যে কথা হয় সদ্য এইচএসসি পাশ করা শ্রাবণী খাতুনের সাথে। বোতল দিয়ে বড়আব্বার নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে এই খুশিতেই সে বালু ভরছে বোতলে। সবার সাথে হেসে-খেলে বালু ভরতে ভালোই লাগছে বলে জানায় শ্রাবণী।
বাড়িটির রাজমিস্ত্রি অর্থাৎ প্রধান নির্মাণ কারিগর নজরুল ইসলাম বলেন, ২৭ বছর যাবৎ রাজমিস্ত্রির কাজ করছি তবে বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা এটা আমার প্রথম কাজ। প্রায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের এই বাড়ির মধ্যে থাকছে ৪টি বেডরুম, একটি ডায়নিং রুম, একটি রান্নাঘর ও পৃথক দু’টি বাথরুম। একতলা বিশিষ্ট এই বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন করতে উপরে কারুকাজ সম্বলিত রঙ্গীন টিন ব্যবহার করা হবে। আর এই বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ১টন বোতল লাগতে পারে। এর মধ্যে ২ লিটার, ১ লিটার ও আধা লিটারের বিভিন্ন রং এর বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে।'
স্থানীয় গ্রামবাসী দেলোয়ার হোসেন, অত্র এলাকার অনেকেই বলছে আমাদের (গোটিয়া) গ্রামে একটু নতুন বোতলের ঘর হচ্ছে। এজন্য খুব ভালো লাগছে। আশা করি এটা যদি সম্পূর্ণ রূপে তৈরি হয় তবে এলাকাতে অবশ্যই এর প্রসার ঘটবে। ইটের চেয়ে সাশ্রয়ী হলে অনেকেই এই বোতলের বাড়ি দিবে। সাশ্রয়ী হলে তিনিও দিবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।
বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি হচ্ছে এমন খবরে শুনে তা দেখতে এসেছেন জুয়েল রানা নামের স্থানীয় এক কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত রকমারি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। ভাবতেই পারিনি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করা যায়? বাড়িটি দেখার জন্য পথচারী ছাড়াও আশে-পাশের গ্রামের উত্সুক মানুষজন আসছেন। এতে করে আমাদের অনেক ভালো লাগছে বলেও জানায় জুয়েল।’
পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, লোকমুখে শুনেছি উপজেলায় প্লাস্টিকের নানা রঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ও জেনে-শুনে তারপর বলা যাবে এমন বাড়ির স্থায়িত্ব কেমন হবে।’
0 মন্তব্যসমূহ