Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

পুঠিয়ায় রাত নামলেই অবৈধভাবে পুকুর খননের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার: পুঠিয়ায় রাত নামলেই ফসলি জমিগুলোতে অবৈধভাবে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে যায়। পুকুরের মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করতে গ্রামীণ সড়কগুলোতে সারারাত দাঁপিয়ে চলছে নম্বর প্লেট বিহীন ড্রামট্রাক ও অবৈধ ট্র্যক্টর। স্থানীয় এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে গ্রামবাসীর সাথে পুকুর মালিক ও মাটিবাহী গাড়ি চালকদের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা সদরের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের নয়ন মোল্লা বলেন, পরীগাছা-বারইপাড়া এলাকায় ফসলি জমিতে রাতের আধাঁরে একটি দিঘি খনন করা হচ্ছে। আর ওই দিঘির মাটি প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটার মালিকরা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে আমাদের এই সড়ক ভেঙে গেছে। পাশাপাশি সারারাত গাড়ির শব্দের কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও তিনি রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন।

জানা গেছে, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে গত দু’বছর আগে জনস্বার্থে মহামান্য হাইকোর্টে ২৪৭৬/২০১৯ নম্বরে একটি রীট আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২০১৯ সালে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন বা পুকুর খনন না করতে আদেশ দেন। পাশাপাশি কোথাও পুকুর খনন কাজ চললে উপজেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আধাঁরে পুকুর খনন কাজ শুরু করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

শিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মকুল বলেন, পুকুর খননের বিষয়টি উপজেলা আইন শৃংখলা ও মাসিক সভায় আলোচনা করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং পুকুর মালিকরা একটি বড় মহলকে ম্যানেজ করে তাদের খনন কাজ অব্যাহত রেখেছেন। পুকুর ও ড্রামট্রাক-ট্রাক্টর মালিকদের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলোর চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এই ইউপি এলাকায় ফসলি জমির চেয়ে পুকুর বেশী। এখনো ১০-১২ স্থানে খনন কাজ চলছে। এর মধ্যে যাদের আদালতের কাগজপত্র আছে তারা দিনে আর বাকিরা গভীর রাতে খনন করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূইয়া বলেন, এখানে পুকুর খনন বিষয়ে কেউ আইন বা নির্দেশনা মানছে না। যার যেখানে ইচ্ছে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুকুর খনন করছেন। এতে করে এই অঞ্চলের ফসলি জমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাপক ফসলহানী ঘটছে।

এ বিষেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমানা আফরোজ বলেন, উপজেলায় নতুন করে কি পরিমাণ জমিতে পুকুর খনন হয়েছে বা হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো হয়নি। তবে আমাদের ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো ও সার্ভেয়ারকে বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, পুকুর খনন রোধে এলাকার লোকজনদের সচেতন করতে আমরা সভা সমাবেশ করেও তা রোধ করতে পারছি না। জমির মালিকরা অতিরিক্ত অর্থের লোভে পুকুর চাষিদের কাছে জমি দিয়ে দিচ্ছে। এরপর পুকুর চাষিরা স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের মদদে গভীর রাতে ফসলি জমিতে পুকুর করছে। আবার অনেকে পুকুর খনন করতে আদালতের নির্দেশনা আনছেন। যার কারণে আমাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খনন বন্ধে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে এলাকার ফসলি জমি রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে প্রতিবাদ করতে হবে। আর রাতের আধাঁরে গ্রামীণ সড়কগুলোতে দাঁপিয়ে চলা ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টর প্রতিরোধে আমরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালাচ্ছি। তাদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ