Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

বিলুপ্তির পথে পুঠিয়ার আট নদী!

এইচ এম শাহনেওয়াজ: রক্ষণাবেক্ষণের ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ছোট বড় আটটি নদী বিলুপ্তির পথে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় দখলদাররা নদী দু’পাড় কেটে নদীর বেশির ভাগ অংশ ফসলি জমিতে রূপ দিয়েছে।

বাকি অংশে দীর্ঘদিন থেকে পানি চলাচল না থাকায় তাও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন ও খরা মৌসুমে অধিকাংশ ফসলি জমিতে সেচ কাজে পর্যাপ্ত পানি সঙ্কট দেখা দেয়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের গভীর খরস্রোত মুসাখাঁ, নারোদ, রায়চাঁদ, নিশানিশি, আইচাঁদ, সোকা, হোজা ও সন্ধ্যা নদী কালের গর্ভে প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদীগুলোর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তবে গত দু’বছর আগে নারোদ ও হোজা নদীর সংষ্কার করা হলেও পানি চলাচল না থাকা এবং বিভিন্ন স্থানে বাঁধের কারণে আবারও তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের তথ্যমতে এক সময় পুঠিয়া, নাটোর রাজপরগনাসহ পশ্চিম বাংলার কোলকাতা ও গাজীপুর রাজাদের রাজ্যর যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। তাদের যাতায়াত ও পণ্য বহনে নদীগুলো ব্যবহার করা হতো। সে সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সওদাগররা নদী পথে বাণিজ্য করতো। জনশ্রুতি আছে মুসাখাঁ নদীর উপজেলার পানানগর এলাকায় খড়স্রোতে ধনপতি চাঁদ সওদাগরের কয়েক হাজার মণ মাল বোঝাই বাণিজ্যিক নৌকা ডুবে হারিয়ে যায়। অথচ বর্তমানে সে স্থানে পানিতো দূরের কথা নদীর কোনো চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায় না। অথচ কালের বিবর্তনে মূসাখাঁ নদীও বর্তমানে ফসলি জমি ও বাগ-বাগিচায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। অপরদিকে সুন্দর, পাবলই, বারনই, রায়চাঁদ নদীর বর্তমানে চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে গেছে।

জানা গেছে, আশির দশকে রাজশাহীর পদ্মার শাখা বড়াল নদীর মুখে সুইজ গেইট নির্মাণ করা হয়। যার ফলে পুঠিয়ার মুসাখাঁসহ সকল নদী ও খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিগত দিনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মূসাখাঁ নদী পুনঃখনন ও সংষ্কারের নামে লাখ লাখ টাকা খরচা করলেও পানি চলাচল না থাকায় তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকরা। গত কয়েক বছরে সংষ্কারকৃত মুসাখাঁ পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

আসু চন্দ্র দাস নামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, কয়েক দশক আগে উপজেলার নারোদ নদীর তীরে পুঠিয়ার কেন্দ্রীয় শ্মাশানঘাট ছিল। কিন্তু সেখানে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি সল্পতার কারণে তা স্থানান্তর করা হয় মুশাখাঁ নদীর পীরগাছা এলাকায়। তিনি আরও বলেন, ওই নদীগুলোর বেশিরভাগ জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের দখলে নিয়েছে। অনেকেই ওই নদীর ভরাটকৃত স্থান লিজ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ আবার বসত বাড়ী ও ফসলী জমি হিসাবে ব্যবহার করছে।

জিউপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদী গুলো আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য ওই নদী গুলোতে আর পর্যাপ্ত পরিমান পানি পাওয়া যায় না। আবার নদী গুলো ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নদী গুলো পূণঃখনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা অতি জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, বর্তমান আ’লীগ সরকার নদী রক্ষা ও পূণঃসংস্কারের কাজ জোরদার করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই উপজেলায় পানি চলাচলের জন্য কয়েকটি নদী দখল মুক্ত করে এর মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি নদী গুলো পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ