সরকারি নিয়ম অনুসারে হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিটি পণ্যের তালিকা ও খাজনার পরিমাণ উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাইনবোর্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। যার ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের নামে জোরপূর্বক ভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর বাংলা সনের জন্য বানেশ্বর হাট-বাজার প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য স্থানীয় ওসমান আলীর নিকট ইজারা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ঝলমলিয়ার হাট ৩১ লাখ এক হাজার ২শ’টাকায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন একজন রাজনৈতিক নেতার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই হাট তিন দফা হাত বদল হয়ে একজন ইজারদার ৪২ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন।
উপজেলার হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রথম শ্রেণির হাট গুলোর মধ্যে বানেশ্বর হাটের নাম আসে। এরপর পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ঝলমলিয়া হাটের নাম রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে হাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের তালিকা ও খাজনার পরিমাণ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড দেওয়ার নিদের্শনা রয়েছে। অথচ নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় হাট ইজারাদারা তা ব্যবহার করছেন না।
বানেশ্বর হাটে আগত গরু-ছাগল ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম অভিযোগ তুলে বলেন, এই হাটে প্রতিটি গরু ক্রয় এবং বিক্রয়কারীর উভয়ের নিকট থেকে খাজনা নেয়া হচ্ছে। ক্রেতার নিকট থেকে প্রতিটি গরু প্রতি ৫শ’ টাকা আর বিক্রেতার নিকট থেকে একশ’টাকা হারে খাজনা আদায় করছে। ছাগল প্রতি ২০০ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
ঝলমলিয়া হাটে আগত সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হাট ইজারদার প্রতিমণ কাঁচা মালামালের জন্য ৪৫-৫০ টাকা হারে আদায় করছেন। আবার কাঁচামালের বাজার চড়া হলে খাজনার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। অথচ বিগত বছর গুলোতে প্রতিমণ ২০/২৫ টাকা হারে খাজনা আদায় হতো। আর ইজারদারের লোকজন খাজনা নিলেও আমাদের কোনো রশিদ দেয় না। মুরগি বিক্রেতা তারিকুল ইসলাম বলেন, আদায়কারীরা হাঁস-মুরগি কেনা-বেচায় শতকরা ১৫ টাকা হারে উভয় পক্ষের নিকট থেকে খাজনা নিচ্ছে।
তারা খাজনার নামে রীতিমত জোরপূর্বক চাঁদাবাজি শুরু করে দিয়েছে। যার কারণে বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা হাটে আসতে চাচ্ছেন না। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গড়ে উঠা আড়ৎ গুলো থেকে মালামাল ক্রয় করছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঝলমলিয়া হাটের একাধিক খাজনা আদায়কারী বলেন, প্রতিবছর ইজারাদার শুধুমাত্র হাট ইজারা নেন। এরপর তিনি হাটের বিভিন্ন অংশ আমাদের মত খাজনা আদায়কারীদের নিকট সাব-ইজারা দেন। প্রতিবছর আমরা ইজারদারের নিকট থেকে বেশি টাকা দিয়ে সাব-ইজারা নিতে হচ্ছে। যার কারণে আমাদেরকেও খাজনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুন খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পৌর সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, হাট ইজারা দেয়ার ইজারদারকে খাজনার তালিকা বিভিন্ন স্থানে লাগাতে বলা হয়েছিল। আর অতিরিক্ত খাজনা আদায় হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ পৌরসভায় আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ-এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
0 মন্তব্যসমূহ