আর এই শিল্পের সাথে জড়িত ১৭টি কারখানায় প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক তাদের কর্মস্থানের ওপর প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে কারখানা মালিকরা দাবি করছেন, সরকারিভাবে ঋণ সহয়তা দেওয়া হলে এই শিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব। পাশাপাশি এলাকার শত শত বেকার লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে দাবী করছেন তারা।
জানা গেছে, জেলার প্রথম বানেশ্বর ইউনিয়নের শিবপুরহাট জাগিরপাড়া গ্রামে দাড়িপাল্লা ও কড়াই শিল্প গড়ে উঠে। আর সেখানে প্রথমে এই কাজ শুরু করেন মরহুম ওমর আলী মণ্ডল। তার এই শিল্পের কাজে গ্রামের অনেকেই উৎসাহি হয়ে উঠেন। বর্তমানে ওই গ্রামে ১৭ টি কারখানায় কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন ভোররাত থেকে ওই কারখানাগুলোতে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ।
কারখানায় তৈরি হচ্ছে দাড়িপাল্লা, কড়াই, হাতা, চাল-ডাল ওজন কাজে ব্যবহৃত বোমা, বেলচা, কাজলদানী বিভিন্ন সাইজের মালামাল। আর এই মালামালগুলো তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিটুমিনের ডাম ও প্লেনসিট। পুরান ঢাকার ধুলাইখাল ও চট্টগ্রাম শিপাইড কারখানা থেকে ওই ডামগুলো এখানে আমদানি করা হয়।
কারখানার কারিগররা বলছেন, গত কয়েক বছর থেকে দেশের সবখানে আধুনিক ইলেকট্রিক ডিজিটাল মাপ যন্ত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীর আর্বিভাব ঘটেছে। এতে দেশের বৃহৎ এই কারখানার কাজ গুলো বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে। কর্মচারী আকছেদ আলী বলেন, প্রতিটি কারখানায় শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তাদের কাজের উপর ভিত্তি করে। ড্রাম কেটে প্রকার ভেদে একসেট পাল্লা তৈরি সম্পন্ন করলে মুজুরি দেওয়া হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানায় একজন শ্রমিক কাজ করলে মুজুরি পায় ৩ শ থেকে সাড়ে ৩ শ টাকা পর্যন্ত। এই টাকায় বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর। তার ওপর ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর ইলেকট্রিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বাজারে আসায় কারখানাগুলোতে আগের মত কাজও হয় না।
কারখানা মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, এই শিল্পের কাজ রাজশাহীর মধ্যে আমরাই শুধু করে থাকি। এছাড়া নওগাঁ জেলার উথলী ও বগুড়া এলাকার কয়েকটি গ্রামে দু’একটি পরিবারের মধ্যে দেখা যায়। তবে আমাদের এখানে সবচে বেশি মালামাল তৈরি করা হয়। আমাদের উৎপাদিত মালামালগুলো রাজধানী ঢাকাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, নওগাঁ জেলায় সরবরাহ করা হয়।
অপর কারখানা মালিক ইয়াকুব আলী বলেন, বর্তমান বাজারে ড্রামের মূল্য অনেক বেশি। তার ওপর কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। এদিকে বাজারে ইলেকট্রিক মাপ যন্ত্র ব্যবহার চলছে। এতে ব্যবসায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। পাশাপাশি এই শিল্পের কার্যক্রম চালাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন পরে। এখানে অনেক কারখানার মালিকরা আছেন যারা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও স্থানীয় মহাজনদের নিকট থেকে চওড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। যার ফলে লাভের বেশির ভাগ অংশ চলে যায় ঋণ শোধ দিতে।
বর্তমানে একটি ড্রাম কিনতে ৭ শ ৫০ থেকে ৮ শ টাকা ব্যয় হচ্ছে। তা থেকে মালামাল তৈরি করে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত সব খরচ বাদে ৫০ থেকে একশ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে এই শিল্পে আর্থিক সহয়তা করলে কারখানাগুলো চালু রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কারখানাগুলোতে বেকার লোকজনদের কর্মসংস্থানের চাহিদা বাড়বে।
0 মন্তব্যসমূহ