Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

পুঠিয়ায় নিহত ট্রাক চালক আবু তালেবের তিন সন্তান নিয়ে বিপাকে স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: পুঠিয়ায় তদারকির অভাবে নিহত ট্রাক চালক আবু তালেব হত্যা মামলা ঝিঁমিয়ে পড়েছে। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীকে হারিয়ে ছোট তিনটি সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন স্ত্রী নারগিস বেগম।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ হত্যার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনার সাথে জড়িত বেশির ভাগ আসামিরা আটক হয়নি। পাশাপাশি এখনো শেষ হয়নি মামলার তদন্ত কাজ। ছেলে-মেয়েদের খাবার যোগান দিবেন, না মামলার পিছনে ছুটবেন, এই নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন বাদী নিজেই।

সরেজমিনে পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়ায় অবস্থিত মৃত ট্রাকচালক আবু তালেবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির বাহিরে ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী নারগিস বেগম ইফতারি ও রাতের খাবার তৈরি করছেন। ইফতারিতে শুধু মুড়ি ও চানাচুর। আর রাতে ও সেহেরির খাবারের জন্য রান্না করেছেন ভাত ও আলু ভর্তা।

তারা যে বাড়িতে থাকেন সে ঘরে চার দেয়াল ইটের হলেও ওপরে ছাদ নেই। ঘরের ওপরে গোজাতালিতে আচ্ছন্ন হলেও একটু বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয় তাদের। নেই স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট ব্যবস্থাও। এ অবস্থায় তাদের সহায়তা করবে এমন কেউ নেই। পরিবারের সকলের চেহারায় এখন অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি।

নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বলেন, গত ১৩ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল আবু তালেব অরফে সোহরাবের সাথে। এরপর একে একে ৩ সন্তানের জন্ম হয়। এরমধ্যে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের নাম উষা (১৩) মেজো মেয়ের নাম ইতি (৮) ও একমাত্র অবুঝ ছোট ছেলে ইসরাইলের বয়স দু’ বছর। স্বামীর জায়গাজমি না থাকার কারণে বাবার বাড়িতেই কোনোমতে মাথা গুজে থাকেন স্বামীসহ।

গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজার এলাকায় দুটি ছাগল মেরে ফেলার গুজবে তার স্বামী আবু তালেবকে পিটিয়ে হত্যা করে কিছু মানুষ রূপি অমানুষ। আর এর পরপরই তার ও ছেলে-মেয়ের ভাগ্যে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। এখন অবুঝ ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয় তাদের।

কোনোদিন খেতে পান আবার কোনোদিন না খেয়েই পার করতে হয়। তিনি আরও বলেন, স্বামী হত্যার ৭-৮ দিন পর স্থানীয় সাংসদ ডা. মনসুর রহমান তার বাড়িতে এসেছিলেন। পরে তার ঘরের ছাদ দিয়ে দিবেন এবং তাদের একটা কার্ড করে দিবেন বলে বলেছিলেন। কিন্তু সেটা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি।

বড় মেয়ে উষা খাতুন বলেন, আব্বা মরে যাওয়ার পর এখন আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ভাই বোনদের আর কেউ খাবার জিনিস কিনে দেয় না। আশেপাশের ছেলে-মেয়েরা যখন খাবার জিনিস খায় তখন আমার অনেক খারাপ লাগে। মার কাছে টাকা না থাকায় আমার ছোট বোন ও ভাইকে কিছু কিনে দিতে পারে না। তখন আমি কান্না করি না কিন্তু ছোট বোন ও ভাই অনেক কাঁদে। আচ্ছা ওরা কেনো আমার ভালো আব্বাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে!

প্রতিবেশী ও পুঠিয়া পৌর আ’লীগের সভাপতি আবু বাক্কার বলেন, নিহত ট্রাক চালক আবু তালেব সম্পর্কে আমার আত্মীয়। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরের দেয়া সামান্য জমিতে ছোট একটি ঘর তুলে স্ত্রী দু’ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি সব সময় অসহায় মানুষের উপকার করতেন। ট্রাক চালিয়ে যে সামান্য বেতন পেতো তাতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার হতো। এখন তার স্ত্রী ছোট তিনটে বাচ্চা নিয়ে মহা বিপাকে আছেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমার জানামতে নিহত ট্রাক চালক আবু তালেব হত্যা মামলা এখনো তদন্তাধিন আছে। এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রকম গাফলতি নেই। তবে মামলার কাগজপত্র দেখে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ট্রাক চালক আবু তালেব বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে মালামাল নামিয়ে পুঠিয়ায় ফিরছিল। পথে তাহেরপুর বাজারের নিকট ট্রাক চাপায় ছাগল মারা যায়। স্থানীয় লোকজন ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে তাড়া করে ধরেন। পরে তারা ট্রাক চালককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

স্থানীয় লোকজন রাতে পুঠিয়া হাসপাতালে আনলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সে মারা যায়। ঘটনার পরদিন স্ত্রী বাদি হয়ে পুঠিয়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করতে পেরেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ