Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

মিশ্র ফলচাষে ঝুঁকছেন পুঠিয়ার চাষিরা!

এইচ এম শাহনেওয়াজ: পুঠিয়ায় চাষিরা বাণিজ্যিক ভাবে দেশি-বিদেশি ও উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রকার ফলজ চারা রোপণ শুরু করছেন। এদের মধ্যে অনেকই মিশ্র ফলজ বাগান গড়ে তুলেছেন। অপরদিকে বাজারে দেশিয় উৎপাদিত ফলের চাহিদা এখন বেড়েছে। যার কারণে অনেকেই ফলের বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সংশ্লিষ্ঠ চাষিরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করতে পারলে একই জমিতে দীর্ঘ মেয়াদী ফল চাষ করা যায়। সেই সাথে অল্প জমিতেও পরিকল্পিত ভাবে মিশ্রিত ফল বাগান গড়ে তোলা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাকলাইন হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে মিশ্রিত ফলের বাগান গড়ে উঠছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্য মোতাবেক প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফলজ চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে রোপণকৃত বাগান থেকে আশানুরূপ ফলন আসা শুরু হয়েছে। এতে চাষিদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে জমির পরিমাণ তিনগুণ হবে। রোপণকৃত বাগানগুলোতে উন্নত জাতের বিভিন্ন কমলা, মাল্টা, ড্রাগন, পেয়ারা, বরই, আম গাছ রয়েছে। আর বাগানগুলোতে সঠিক সময় পরিচর্যা করতে পারলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক লাভবান হবে।

উপজেলার জিউপাড়া এলাকার বাণিজ্যিক মিশ্র ফল চাষি আসাদুল হক আসাদ বলেন, গত কয়েক বছর আগে এখানে ১৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে একটি মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলেছি। গত দেড় বছর আগে এই বাগানে বাহিরের উন্নত জাতের মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, আমের চারা রোপণ করা হয়েছে। বাগানের কয়েকটি স্থানে একই সাথে পেয়ারা, বরই, মাল্টা ও কমলার চারা রোপণ করেছি। ইতিমধ্যে বাগানের অধিকাংশ গাছগুলোতে ফল আসা শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই বাগানের ভেতরে একটি অংশে উন্নত জাতের বিভিন্ন ফলের চারার নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে এই বাগান ঘিরে ২০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ধোকড়াকুল ডিগ্রি কলেজেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শাখাওয়াত উল্লাহ মুন্সি বলেন, কানাইপাড়া গ্রামে আমার নিজেস্ব ১৫ বিঘা জমিতে জাপানি সূর্য ডিম, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাঙ্গ, গৌরমতি, কাটিমন, টাইওয়ান ও বারী ফোর জাতীয় আমের বাগান করেছি। পাশের জমিতে দার্জিলিং ও ম্যান্ডেলিনা জাতের কমলা চারা লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে সার্থী ফসল হিসেবে বারী-৪ ও সুপারে ১০ জাতের পেয়ারা, বলসন্দরী ও কাশমেরী জাতের বরই এর চারা রোপণ করা হয়েছে। এখন চারাগুলো ছোট আছে তাই বরই ও পেয়ারা দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর আম, কমলা গুলো থাকবে দীর্ঘ মেয়াদী। এই বাগানগুলো প্রাথমিক ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে ফল আসার পর লাভজনক হলে জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, এই ফলের বাগানগুলো দেখতে ও পরামর্শ নিতে সব সময় লোকজন আসছেন। তাদের পরামর্শের সাথে উন্নত জাতের চারা পেতে সহায়তা করছেন বলেও জানান তিনি।

নাটোর জেলার ফল চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর পুঠিয়া উপজেলার বিলমাড়িয়া এলাকায় দুটি স্থানে ৩৫ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। বর্তমানে ওই জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করায় বাগান খুবই ভালো হয়ে উঠেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মৌসুমে বেশির ভাগ গাছগুলোতে পুরোদমে ফলন আসবে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে ফলন আসা পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর প্রকৃতিক দূর্যোগ না হলে ওই এক বিঘা জমি থেকে পর্যায় ক্রমে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুনাহার ভূইয়া বলেন, এক সময় এই এলাকায় প্রায় হাজার একর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর পর আবহাওয়া ও জমি নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক চাষিদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এখন ওই চাষিরাই উন্নত জাতের মিশ্র ফল চাষ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন। তাদের দেখে উৎসাহ হয়ে অনেকই আধুনিক প্রযুক্তিতে ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। মাঝে মধ্যে অনেকেই পরামর্শ ও উন্নত জাতের চারার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। এছাড়া আমাদের উপসহকারী কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে চাষিদের সার্বিক খোঁজ-খবর ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ