Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

পুঠিয়ায় ঋণে জর্জরিত ধানের চাতাল মালিকরা

এইচ এম শাহনেওয়াজ: এক সময় রাজশাহীতে চাল উৎপাদনের শীর্ষে ছিল পুঠিয়া উপজেলা। তাই এ শিল্পে লাভের আশায় বাড়তে থাকে চাতালকলের সংখ্যা। ক্ষুদ্র চাল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এই শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের। তবে গত এক দশকে নানামূখী জটিলতার কারণে শতাধিক ধানের চাতাল ও মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে লোকসান গুণছেন। অনেকেই চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পথে বসে গেছেন। সেই সাথে বেকার হয়ে ঘুরছেন চাতাল মিলের কাজে নিয়োজিত শতশত শ্রমিক।

স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে জানা গেছে, নব্বই দশক থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক ধানের চাতাল ও মিল গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে খাদ্য গুদামের তালিকাভুক্ত মিলারের সংখ্যা রয়েছেন মাত্র ৪০ জন। তার মধ্যে অনেকেই এখন আর ব্যবসা করেন না। তবে বিগত সময় চাতালমিলগুলোতে চাউল উৎপাদন কাজে যুক্ত ছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর এই শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছিল প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের। যার বেশির ভাগই অংশ নারী শ্রমিক। তবে গত ১০ বছর থেকে নানা কারণে ধস নেমেছে এই শিল্পে। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক চাতাল মিল। সেই সাথে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন বেশির ভাগ মিল মালিকরা। আর বেকার হয়ে গেছেন এ কাজে যুক্ত শতশত শ্রমিক।

শনিবার সকালে উপজেলার ধোপাপাড়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ধানের চাতাল ও মিল বন্ধ পড়ে আছে। দীর্ঘদিন রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে চাতাল মিলের বিভিন্ন উপকরণ ধ্বংস হয়ে গেছে। কোথাও আবার চাতাল মিল ভেঙে ফসলি জমি তৈরি করা হয়েছে। মিলের কাজ করা শ্রমিকরাও বদলিয়েছেন তাদের পেশা। তার মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন থেকে বেকার হয়ে ঘুরছেন।

আবু তালেব নামের একজন চাতাল মালিক বলেন, প্রতিটি মিল মালিক বিভিন্ন ব্যাংক অথবা মহাজনদের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন। তবে ২০১১ সালের পর থেকে আর কেউ টিকে থাকতে পারছেন না। এদিকে ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় মালিকরা চাতাল কল বন্ধ করে দিয়েছেন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় উপজেলার মধ্যে প্রায় ২০টি চাতাল মিল নিলাম হয়েছে। আরও ১৫-২০ টি চাতাল মিল নিলামে উঠার প্রক্রিয়াধিন।

তিনি আরও বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল মালিকরা ব্যবসার নামে এক একজন ২৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছেন। প্রাথমিক হিসাবে এই শিল্পে ঋণ রয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। কেনো এই ব্যবসায় ধস নেমেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে সরকার মিলারদের নিকট থেকে চাল ক্রয় করতে খাদ্যগুদামকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ এখানে মিলার শুধু খাতা-কলমে। চাল সরবরাহ করছেন রাজনৈতিক নেতারা। অপরদিকে বাজারে ধানের দাম বেশি। আর সরকার অল্প দামে খোলা বাজারে ভূতুকি দিয়ে চাউল বিক্রি করছেন। যার কারণে ব্যবসায়ীদের চাল উৎপাদনে চরম লোকসান লোকসান হচ্ছে।

ধোপাপাড়া বাজারের চাতাল ও মিল মালিক আফজাল হোসেন বলেন, এক সময় রাজশাহী জেলার মধ্যে চাল উৎপাদনে শীর্ষে ছিল ধোপাপাড়া এলাকা। এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক চাতাল মিল গড়ে উঠেছিল। প্রতিটি চাতালে ৫-৭ জন ব্যবসায়ী চাল উৎপাদনের ব্যবসায় যুক্ত ছিল। এখন নামে মাত্র ১০টির মত চাতাল মিল চালু আছে। বাকিরা ঋণের দায়ে জর্জরিত। তারা মিলের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্পে প্রণোদনা দিচ্ছেন। অথচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনদের সে সুবিধা দিচ্ছেন। আর প্রকৃত ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাজমা বেগম নামের একজন চাতাল শ্রমিক বলেন, এক সময় ধোপাপাড়ায় স্বামী-স্ত্রী দুইজন একটি চাতালে কাজ করতাম। গত ৫ বছর আগে মিলটি বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর অনেক মিলে কাজের জন্য যোগাযোগ করেছি কিন্ত কোথাও পাইনি। আমাদের মত এরকম অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। তিনি (স্বামী) জমিতে কাজ করতে পারেন না। তাই বাড়িতেই বেকার বসে থাকেন। আর আমি কখনো মাঠে আবার কারও বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি।

এ ব্যাপারে উপজেলা চাতাল কল মালিক সমিতি সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে এই চাতাল কল শিল্প টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসেছেন। চাতাল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সকল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার সুবিধায় দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ