নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজশাহীর দুর্গাপুরে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে দুর্গাপুর মানুষের জনজীবন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের যে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপুর উপজেলা এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও এলাকাভিত্তিক ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তা ছাড়া যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে তার সাথেও লোডশেডিংয়ের কোনো মিল থাকছে না। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎহীন পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও।
হাসিবুল স্টার কর্ণধার রফিকুল ইসলাম
বলেন, লোডশেডিং এর আগেও হয়েছে। তবে সে সময় বাস্তবতার সাথে মিল রেখে অনেকেই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে উচ্চমূল্যে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর ফলে কয়েক গুণ বেশি বিল নিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি তার ঠিক উল্টো। তারপরও বাস্তবতা মেনে নিয়ে অনেকেই এক-দুই ঘণ্টার লোডশেডিং মেনে নিয়েছিল। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা একেবারে যাচ্ছেতাই। তিনি বলেন, গত শনিবার তার এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে পাঁচবার। এর মধ্যে একবার দেড় ঘণ্টা ও দুইবার হয়েছে এক ঘণ্টা করে। বাকি দুইবার হয়েছে ৩০ মিনিট ও ১৫ মিনিট করে। সব থেকে সমস্যা হচ্ছে এই গরমে যখন রাত পৌনে ১টা এবং ভোর পৌনে ৩ টায় বিদ্যুৎ চলে যায় তখন কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারে?
একই এলাকার আলেয়া বেগম বলেন, শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে একবার বিদ্যুৎ চলে যায়। চার বছর ও এক বছর বয়সী দু’টি সন্তান নিয়ে হাতপাখা দিয়ে কোনোরকম পার করে দেন এক ঘণ্টা। এরপর দুপুরে খাবার পরে ৪টার দিকে বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে ঠিক তখন আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। দু’টি সন্তানই গরমে কান্না শুরু করে। নিজেও ঘেমে ভিজে যাচ্ছিলেন। কিভাবে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। সন্ধ্যার সময় স্বামীও অফিস থেকে বাসায় ফেরেন। রাত ১২টার দিকে তারা ঘুমোতে যান। ছোট সন্তান ঘুমিয়ে গেলে বড়জন জেগে ছিল। রাত সোয়া ১টার সময় আবার লোডশেডিং। এবার অফিসফেরত স্বামী না ঘুমিয়ে হাতপাখা দিয়ে বাচ্চাদের বাতাস করতে থাকেন। সোয়া ২টার দিকে বিদ্যুৎ এলে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। ভোর পৌনে ৪ টায় আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। এবারো গরমে কান্না শুরু করে উঠে যায় বাচ্চারা। বেচারা বাবা আবারো হাতপাখা ঘুরাতে থাকেন। সকাল ৬টার দিকে যখন বিদ্যুৎ আসে ততক্ষণে না ঘুমিয়ে তীব্র মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাচ্চাদের বাবা আসলাম রহমান। এভাবে চলতে থাকলে শিশু নয়, পরিবারের অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আলেয়া বেগম আরো বলেন, মানুষ যখন একটি জিনিসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে সেখান থেকে ফেরাতে গেলে বিপত্তি ঘটবে।
পৌর সভার বাসিন্দা হামিম উল কবির জানান, তার এলাকায় তিন ঘণ্টা লোডশেডিং বাধ্যতামূলক থাকেই। এর বাইরেও প্রতিদিন ৩০ মিনিট ২০ মিনিট করে যায় আরো কয়েকবার।
দুর্গাপুর উপজেলা বাসিন্দা জনাব মাহাবুব আলম বলেন, ইফতার তারাবির নামাজ ও সেহরি সময় বিদ্যুৎ থাকে না জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।দুর্গাপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসীনতায় মানুষ এখন দিশাহারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছে দেশ তখন কিছু দুষ্কৃতী লোক উদাসীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ কে নেবে দায়িত্ব।
দেলুয়াবাড়ি ইউপির এক বাসিন্দা জানান, নিয়মিত লোডশেডিংয়ের জন্য আমাদের জনজীবনের পাশাপাশি সেচ কার্যক্রম চালাতে পারছি না। ধান খেত খড়ার কবলে পড়েছে। দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান করা হোক।
0 মন্তব্যসমূহ