সাধারণ রোগী ও অভিভাবকরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালের ডাক্তারগণ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলে অপেক্ষামান দালালরা তাদের ক্লিনিক-প্যাথলজিতে নিতে টানা-টানি শুরু করে দেয়। এ সকল বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের প্রায় ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো দুর্ঘটনা কবলিত রোগী ও উপজেলা এলাকার প্রায় দু’লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা পুঠিয়া ৫০ শয্যা হাসপাতালটি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলা চারঘাট, বাগাতিপাড়া ও দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক রোগীরা এখানে প্রাথমিক সেবা গ্রহণ করেন।
এই হাসপাতাল ঘিরে গত কয়েক বছরে উপজেলা সদর এলাকায় ব্যঙের ছাতার মত গর্জে উঠেছে প্রায় দেড় ডজন ক্লিনিক-প্যাথলজি। যার বেশীর ভাগ ক্লিনিক-প্যাথলজির ভূয়া কাগজপত্রে চলছে। তারা সাধারণ রোগীদের দেয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিভিন্ন চিৎিসকের ভূয়া সীল মেরে প্রতারিত করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেইট থেকে জরুরী বিভাগ পর্যন্ত কয়েকটি স্তরে বিভিন্ন ক্লিনিক-প্যাথলজির নিয়োগকৃত ৫০/৬০ জন দালার অবস্থান করছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ মহিলা দালাল। জরুরী বিভাগের মধ্যে রয়েছে আরো ৬/৭ জন। বর্হি বিভাগের প্রতিটি কক্ষের ভেতরে একজন চিকিৎসকের পাশে ও একজন দরজায় দাড়িয়ে থাকে।
দালালরা সময় মত ক্লিনিক-প্যাথলজির মালিকদের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের খাবার সরবরাহ করে থাকে। এরপর চিকিৎসকরা রোগীদের কোনো প্রকার ব্যবস্থাপত্র বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেই শুরু হয়ে যায় টানা-টানি। রোগিদের জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করছে।
বাগাতিপাড়া থেকে আগত তাহের আলী নামে এক রোগীর অভিভাবক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার স্ত্রীর গত কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভুগছে। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষার ওই কাগজ ডাক্তারের হাত থেকে আরিফুল নামে এক যুবক নিয়ে যায়।
পরে সে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে টানা-টানি শুরু করে। বিষয়টি ওই চিকিৎসকে জানালে তিনি বলেন “ওর সাথে চলে যান কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতালে আগত অযুফা বেগম নামের আরেক রোগীর একই অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, বিভিন্ন দালালদের অত্যাচারে অনেক রোগীরা বিরক্ত হয়ে উঠেন। আমরা অনেক সময় প্রতিবাদ করতে পারি না। ক্লিনিক-প্যাথলজির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের ওপর বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে। জটিলতা এড়াতে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাই না।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা আখতার বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর রোগীদের সঠিক সেবা দেয়ার লক্ষে অনেক কিছুই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের সকল স্টাফদের বলে দিয়েছি হাসপাতালে যেনো কোনো দালাল আসতে না পারে। তবে অনেক দালাল রোগির সাথে হাসপাতালে প্রবেশ করছে মনে হয়। অচিরে বিষয়টির সুরাহা করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ