Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাম্প্রতিক খবর

6/recent/ticker-posts

দুর্গাপুরে বেড়েছে পুকুর, কমেছে মাছের দাম!

জিএম কিবরিয়া: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় হটাৎ করে মাছের দামে ধস নেমেছে। ফলে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে উপজেলার মৎস্য-চাষিরা। বিশেষ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্য-চাষিরা।

বড় চাষিরা ঢাকায় মাছ পাঠিয়ে লোকসান ঠেকালেও স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে মাছ বিক্রি করে বিপাকে পড়েছেন নতুন ও ক্ষুদ্র মৎস্য চাষিরা। পাইকার লাভবান হলেও লোকসানে চাষিরা। অতিরিক্ত দরে পুকুর লীজ ও উচ্চ উৎপাদন খরচের ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলছে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলায় ফসলী জমিতে মাত্রাতিরিক্ত পুকুর খননের ফলে কমেছে ধানসহ অনান্য ফসলের উৎপাদন। এতে  উৎপাদন বেড়েছে মাছের। আর উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় অনান্য ফসলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও নিন্মমুখী মাছের দাম। 

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত দুই বছরে কয়েক হাজার বিঘা নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। যেখানে পূর্বে পুকুরের সংখ্যা ছিলো ২,০০০ মতো কিন্তু বর্তমানে আনুমানিক ২,৫০০ছাড়িয়ে সকল পুকুরের সংখ্যা। 

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সবকিছু ম্যানেজ করে পুকুর খনন করতে মোটা অংকের টাকা গেছে। জমি লিজ ও মাছের খাবার হিসাব করে লোকসানে পড়েছে শতকরা ৯০ জন নতুন চাষী। দুর্গাপুর মৎস্য আড়ৎ-গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় পাইকারী সকল মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। সাথে ‘ডলন প্রথা’ থাকায় মাছের মন ৪৪ থেকে ৪৫ কেজিতে পড়ে।

শনিবার সরেজমিনে পাইকারী বাজার-গুলতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলভার কার্প মাছ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে পূর্বে দাম ছিল ১১০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ২৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। রুই মাছ বর্তমানে ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, আগে ছিল ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা। জাপানি মাছ ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা, আগে ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। বিগহেড কার্প ৯০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, আগে ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। নাইলোটিকা ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, আগে ছিল ১২০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা। কালবাউশ ১৩০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। আগে ছিল ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। মৃগেল ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আগে ছিল ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন টাকি, শোল, শিং ও দেশী মাছের দাম আগের মতোই রয়েছে বলে জানান খুচরা মাছ বিক্রেতারা।

জলিল মৎস্য আড়ত থেকে জানায়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বাহিরে  মাছের বাজার খারাপ এর প্রভাব এখানেও পড়েছে। পরিস্থিতি ঠিক হলে বাজার ঠিক হয়ে যাবে।

এই বিষয়ে চাষী আসাদুল জানায়, বাঁকিতে মাছের খাদ্য নিলে বস্তা প্রতি দুই-তিন শ’ টাকা বেশি নেয় ডিলাররা। আবার বিঘাতে ৫০ হাজার টাকার নিচে জমি লিজ পাওয়া মুসকিল। স্থানীয় বাজারে এতোই মাছের চাপ আর এই কম দাম যে মাছ বিক্রি করে মাছের খাবারের টাকাই উঠছে না। ঢাকায় মাছ চালান দিয়েও তেমন সুবিধা হচ্ছে না। এতে নতুন ও ক্ষুদ্র  পুকুর চাষিরা লোকসানে পড়েছেন।

কৃষক মুক্তার আলী জানান, করোনার কারণে মাছ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। তাই পুকুরে অতিরিক্ত মাছ থেকে গেছে এবং তাদের বাড়তি খাদ্য খাওয়াতে হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। এদিকে মাছের এমন দরপতন ঘটেছে। কবে মাছের বাজার ঠিক হবে তা বলতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে মাছ চাষ বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।

চাষি গোলাম রাব্বানী জানান, অতিরিক্ত পুকুর খনন একদিকে গেছে ফসলী জমি অন্যদিকে অতিরিক্ত মাছের চাপে ঘটেছে এমন দরপতন এটারই সুযোগ নিয়েছে পাইকাররা। আমার মিডিয়াম সাইজের সিলভার বিক্রি করেছি ৬৫ টাকা কেজি স্মরণকালে এমন কম দাম কখনোই দেখিনি। আমার একটাই দাবী অবিলম্বে নতুন পুকুর খনন বন্ধ হোক তাদের জন্য স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি আমরা।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাপ হোসেন জানায়, অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে স্থানীয় বাজারে এমন দরপতন ঘটেছে। নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এমন সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার ইমরুল কায়েস   জানান, সার্বিক পরিস্থিতির কারণেই মাছের এমন দরপতন ঘটেছে চাষি পাইকের উভয়েই আস্থা সংকটে  ভুগছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মাছের বাজার ঠিক হবে।

সবকিছু মিলিয়ে লোকসানে উৎপাদন থেকে সরে আশার  সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেকেই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও দুঃসময় ভাগ্যে লেখা থাকবে দুর্গাপুরের মৎস্যচাষিদের।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ