সোমবার (২ জানুয়ারি) পানানগর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন ব্যাক্তির স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি)র কাছে।
জানা গেছে, উপজেলার পানানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজাহার আলী খান সম্প্রতি যাত্রাপালার আয়োজন করে নেচেগেয়ে ভাইরাল হন। সেই যাত্রাপালায় আপত্তিকর কিছু দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে তার এলাকায়সহ পুরো উপজেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দেয় বিরুপ প্রতিক্রিয়া। অভিযোগে বলা হয়, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে পানানগর গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে নাটোর থেকে কয়েকজন নারীকে ভাড়া করে আনা হয়। এবং সেই নারীদের দিয়ে যাত্রাপালার নামে দেখানো হয় অশ্লীল নৃত্য।
সেই অশ্লীলতায় যোগ দেন চেয়ারম্যান আজাহার আলী নিজেই। মঞ্চে ওঠে সেই ভাড়াটে নারীর সাথে চলে আপত্তিকর নাচগান। চেয়ারম্যান যখন নৃত্যশিল্লীদের জড়িয়ে ধরে নৃত্য করছিলেন সেই সময় এলাকার লোকজন তা মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন। পর দিন সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। চেয়ারম্যানের এমন আচরণ তার নৈতিক স্খলন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যানের উদ্যোগে পানানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিকৃত প্রতিকৃতি সম্প্রতি অঙ্কন করা হয়। এ নিয়ে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিকৃতিটি মুছে ফেলে প্রকৃত আকারে তা অঙ্কনের দাবি করেন। এ খাতে চেয়ারম্যান দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেখালেও মাত্র কয়েক হাজার টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রতিকৃতিটি করা হয় একজন অদক্ষ শিল্লীকে দিয়ে বলে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ।
চেয়ারম্যান আজাহার আলীর দলীয় পরিচয় উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, আজাহার আলী একসময় ছিলেন উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের মনোনয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি বরাদ্দের সিংহভাগই তিনি আত্মসাৎ করেন।
এদিকে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ভাড়াটে নারীদের সাথে নেচে—গেয়ে ভাইরাল হওয়ার পর পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কিছুটা চাপে রয়েছেন চেয়ারম্যান আজাহার আলী।
এসব অভিযোগ নিয়ে পানানগর ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি আগে থেকেই বিভিন্ন যাত্রাপালার সাথে জড়িত আছি। ‘কাশেম মালার প্রেম’, ‘কাজল রেখা’ ও ‘রঙ্গীন রুপবান’ যাত্রাপালায় আমি অভিনয় করেছি। মঞ্চে একটা গান করে এলাকার মানুষকে বিনোদন দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নৃত্যশিল্পীদের কারণে নাচতে বাধ্য হন। এসব নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সমস্যায় আছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। পানানগর স্কুলের প্রধান ফটকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি কিছুটা বিকৃত হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, শিগগির সেটি ঠিক করা হবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এলাকাবাসীর একটা লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে জমা হয়েছে। তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ